Saturday 12 May 2012

স্বপ্ন


মনফসল-এ একটা স্বপ্ন বলে ঘর আছে, যেখানে আমার স্বপ্নটা না লিখে পারছি না। এটা কাল ভোরবেলায় দেখেছি।

আমি হটাত্ একটা টান অনুভব করছিলাম, যেন জামার বুকের কাছে একটা হাওয়ার হাত আমাকে টানছে। আমি বলছি যাচ্ছি যাচ্ছি... সঙ্গে সঙ্গেই ডানদিকে শার্টের হাতায় একইরকম টানের অনুভব। মনে কিন্তু কোন ভয় বা অদ্ভুত লাগার ব্যাপার নেই। আমি বরঞ্চ স্বাভাবিক ভাবেই বলে চলেছি- এইতো যাচ্ছি। কাকে যে বলছি কেজানে। শেষে হাওয়ার হাত আমায় টানতে টানতে যেখানে নিয়ে গেল, সেখানে দেখি বছর সাতেক আগে মারা যাওয়া আমার রাঙা জ্যাঠামশায়ের ছবি। পাশে আরেকজন... জীবিত। তাঁর পায়ের কাছে লুটিয়ে থাকা শাড়িটুকুই নজরে আসছে, বাকীটা অস্পষ্ট।  ঐখানে পৌঁছে দিয়ে হাওয়ার টান ছেড়ে গেল হঠাত্, আমি বসলাম আর ঘুমও ভেঙে গেল।

যতক্ষণ স্বপ্নে ছিলাম কোনো অস্বস্তিবোধ ছিলনা। অথচ ঘুম ভাঙার পর থেকে একটা ঘোরের মধ্যে কাটছে। যেহেতু এই স্বপ্নের একটা বিশেষত্ব আছে অথচ ব্যাখ্যা নেই।

রাঙা জ্যাঠামশাই যে আমার প্রিয় মানুষ ছিলেন ব্যাপারটা তা নয়। তবে হ্যাঁ, ওঁনার আট/দশটি ছেলেমেয়ের মধ্যে সবাইকে একদম চাবুক করে তৈরী করেছেন। শিক্ষায়, সাফল্যের হিসেবে, মানবিকতায় তারা প্রত্যেকে উল্লেখযোগ্য। ওদিকে আমি একমাত্র সন্তান হয়েও একাই বড় হয়ে উঠেছি, ঠকে ঠকে জীবন সম্পর্কে শিক্ষা একাই শিখেছি। কেননা মা ছিলেন একদিকে কোরিওগ্রাফার ও ইউনিভার্সিটির প্রফেসর আর বাবা মিউজিক ডিরেক্টর। জ্ঞান হয়ে থেকে আমি রান্নার মাসী, কাজের দিদি, ড্রাইভার এদেরই দেখেছি, ওদের হাতেই বড় হয়েছি। ঠাকুমাই খালি মারা যাবার আগে বছর তিনেক আমাদের বাড়িতে ছিলেন, সেই স্মৃতিটা খুব ঊজ্জ্বল। কিন্তু তাঁকে স্বপ্নে কখনো দেখলাম না।

কেন যে স্বপ্নে হাওয়ার টান ছিল, কেনই বা একমুখী না থেকে সেটা কখনো সামনে কখনো পিছনে টানছিল, কেনই বা জ্যাঠামশায়ের ছবির সামনে যাবার পর টানের হাত থেমে গেল... কিছু বুঝছি না, সব গোলমাল হয়ে যাচ্ছে।

তবে কি জীবন একদিকে টানছিল অন্যদিকে মৃত্যু ডাকছিল? নাকি জাগ্রত বাস্তব হতাশার ছায়াছবি এটা? মৃত্যু কি শান্তির রূপ? আমি কি সেখানে বসেছিলাম? তবে ঠাকুমা না হয়ে জ্যাঠামশাই কেন? 

2 comments:

Unknown said...

প্রথমেই বলি, স্বপ্নঘরে আমার বাইরের কোনো মানুষকে পেয়ে আহ্লাদে আটখানা হলাম। সোজা স্বপ্ন বিভাগে একে রেখেই এসেছি মন্তব্যে। তোমার স্বপ্ন যেন দর্শনকথা বলছে। অন্ততঃ এই লেখা থেকে তেমন ঘ্রাণই পেলাম।

আমি সাধারণতঃ স্বপ্নকথা জানান দিয়েই দাঁড়ি টানি। কিন্তু এই স্বপ্ন মনোগ্রাহী এ'কারণেই যে নিজেই এর ব্যাখ্যা খোঁজার চেষ্টা করেছ। এককথায় অপূর্ব। এমন মায়াময় স্বপ্নই তোমায় শান্তি দেবে...মৃত্যুর কথা নাহয় নাই ভাবলে।

Asim said...

তোমারটা পড়তে গিয়ে আমারও একটা স্বপ্ন মনে পড়ে গেল চন্দনদা। ঠিক এইরকম নাহলেও অনেকটা কাছাকাছি। এই হাওয়ার টান ব্যাপারটা খুব অবাক করলো। বেশ ভাল লিখেছ। তোমার ঠাকুমার শাড়িই হয়তো তোমার জ্যাঠামশায়ের পাশে দেখেছ... তবে 'জীবিত' কথাটা একটু অন্যরকম লাগছে। হতে পারে তাঁকে হযতো মনের মধ্যে এখনো জীবিত রেখেছ।