মঞ্জুশ্রী রায়চৌধুরী
খ্যাঁচাকল বলতে যা বোঝায়, আমি একদম তার মধ্যিখানে বসে আছি। সবথেকে
বড় প্রবলেম নিজেকে নিয়ে। লিখিনা, লিখিনা... অনেকদিন লিখিনা। মনের মধ্যে একটা পাপবোধ,
চোরা ভয়... পাছে সময় নষ্ট হয়, যে কাজে নেমেছি পাছে হারাই। অথচ কিছুই তেমন করছি না।
আসলে আমি এই ফিল্ডে নতুন এসেছি কিনা, তাই। হঠাত্ বিল্ডার হতে শখ হয়েছিল, ঘুরছি এখন
সেই বৃত্তে। ‘বিপর্যয়’ (যেখানে থাকতাম)-কে বদলে দেখার স্বপ্ন
ছিল বহুদিনের- সেই স্বপ্ন আজ কখনো কালকেউটে কখনো নবোঢ়া। এই ফণা বাগাচ্ছে, এই চোখে
হারাচ্ছে। স্বপ্ন সাকার করতে বুঝি প্রোমোটারের প্রয়োজন? ...উঁহু, ভাবলাম নিজেকে ধরেই
দেখিনা। ব্যস, নেমে পড়লাম। আত্মআস্থা ছিলই আর ইচ্ছে ছিল সঙ্গী... দু’ই নিয়ে এগোলাম।
সেদিন যা লেগেছিল চৌবাচ্চার জল, আজ তা
মাঝসমুদ্র... কূল পাচ্ছিনা, আমি কিনারা-হারা। ঘা খেয়েছি, পড়েছি, তীব্র চাওয়ায় চেয়েছি,
একটু করে এগিয়েছি- ভেবেছি পেরেছি। সেই ভাবনাই আরো একটু এগিয়ে দিয়েছে। মানে ‘বিপর্যয়’ (এ’নামেই আমি ডাকি) নামক ব্যক্তিবাড়িকে
মাল্টিস্টোরিড ‘ঊষাদীপ’-এ দেখতে চেয়ে ভেঙেভুঙে তৈরী করে ফেলেছি জি+4 বহুতলের প্লিন্থ। বীম ঢালাই শেষ, এবার সিঁড়ি উঠছে, লিফ্টরুম, কলাম... মনের
বারান্দা দিয়ে দেখছি ‘ঊষাদীপ’ ঊষা ছোঁয়ার দিকে। এই অবধি ঠিকঠাক কিন্তু এবার মাথায়
হাতুড়ির ঘা। ‘ঊষাদীপ’ টেনশন দিচ্ছে ঘুষঘাষ, লোকাল হ্যাজার্ডস, দু’নন্বরী মানুষপত্তর
ও ফ্ল্যাট বুকিং নিয়ে। এই বাড়ি আমার হাজব্যান্ডের- যার এখানেই প্রায় জন্ম… তবু।
মানুষটি একান্তঃই আমার কাজ সামলাবার দোসর, তার অভিনয় কাটা সৈনিকের ভূমিকায়। ছড়ি
ঘোরাচ্ছি একা, কেননা ইচ্ছেপত্র ছিল আমার। কোনো কাজেই তার ‘না’ নেই বলেই ঘোলাজলে মাছ ধরতে নেমে
পড়েছি বিনদাস। তবে তার বিবৃতি স্পষ্ট- ‘নিজেকে ধরে এগিও, আমি কিন্তু পিছনে।‘
আমি মানুষটা সারাক্ষণ বিভিন্ন কর্মকান্ডের মধ্যে নিজেকে
ফেলে-ফেলে নিজেরই দ্বন্দ্ব-অবস্থান-আগ্রহ-পিছুটান বা পলায়নী প্রবৃত্তির খোঁজ করি। ছেনেবেনে দেখতে
চাই একজন ব্যবসায়ীর এ্যাডভেঞ্চার থেকে একজন মুরগীপালকের মনোভঙ্গী অবধি। একটাই জীবন-উঠোনে অনেক বাঁচায় বেঁচে নিতে চাই,
অনেক অনুভবের সঙ্গে মুলাকাতের বাসনা। ‘আপনাকে
এই জানা আমার ফুরাবে না...’ তবে ‘সেই জানারই সঙ্গে-সঙ্গে তোমায় চেনা’র হিসেবটা যে
এতটা গুলোবে ধারণায় ছিল না। এখন আমি সারাক্ষণ প্রপার্টি ডিলার ‘ক্যুইকার এ্যালার্ট’
আর ‘নাইন্টি-নাইন একর’-এর সঙ্গে কাটাচ্ছি। সে কারণেও পাপবোধ। খালি মনে হচ্ছে নিজের
আসল চরিত্রর থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। আমি আসলে কুসুম বিছানো পথে তো দূর, কাঁটা
বিছানো পথেও নয়, কাচের ওপর হাঁটছি।
‘অপেক্ষাতে-অপেক্ষাতে সূর্য্য ডোবে রক্তপাতে/ এখনো কি ডাকার সময়
আসেনি?/ যে টেলিফোন আসার কথা সে টেলিফোন আসেনি।’
এই যে লিখছি... ভেতরে কিন্তু অশান্তি।
লেখার সঙ্গে সময়টা দিচ্ছিই যদি তবে ‘লেখালিখি’-র সঙ্গে নয় কেন? চিবোচ্ছি নানান
কথা, অবচেতন বলছে এটা বেফায়দার। আমি জানি ’জীবনের ধন কিছুই যায়না ফেলা।’ তবু অশান্তি...
দ্বিধা... দোলাচল। কি করলে যে সত্যি ভাল থাকব জানিনা। লিখে সাফল্য পেলে? দু’নন্বরীদের
নাকে ঝামা ঘষতে পেলে? ফ্ল্যাটগুলো বেচতে পেলে? ঠিকঠাক মা-বৌ-মেয়ে হতে পেলে? কোরিওগ্রাফার,
ডান্সার, অনেক অ-নে-ক প্রোগ্রাম পেলে না ছাত্রী
বাড়লে? কিসে আমি সত্যি খুশী হবো? আজ যা কিছু করছি, যা পেয়েছি কিছুদিন আগেও
কি তা তেমন করে ছিল? আজ এ’সবের সব আছে... অন্তঃত সম্ভাবনায় আছে। তবু আমি অশান্তিতে।
আমার কি তবে মুচি হওয়া উচিত্ ছিল? দিনের শেষে যে একটা জুতো
ভালভাবে সিলতে পেরেছে জেনেই খুশী! বৌ-এর কোল ঘেঁষে দিব্যি ঘুমোয়। ‘চাহত্ না হোতি,
কুছ ভি না হোতা।’ এই’কুছ ভি’ টা কি?
5 comments:
চাইনা আমার গুগুল প্লাস কমেন্ট। এক আল ইমরান ছাড়া কারুর লেখা এমন কি নিজের করা প্রতিমন্তব্যও পড়তে পেলাম না। তাই বদলে ফেললাম... দেখি কি হয়।
গুগুল পলাসের 5 টা কমেন্ট পড়তে পেলাম না।
কুচ ভি টা মনে হয় নিজের সত্তা বা বেঁচে থাকার ইচ্ছে। কারন যার জীবনে কোন চাওয়া নেই, স্বপ্ন নেই, লক্ষ্য নেই, সে একটা লাশ। তার বেঁচে থাকার কোন অর্থ নেই।
না, রে ভাই, এত সহজ-সোজা নয় ঐ 'কুছ ভি'।
শুধুই বেঁচে থাকার ইচ্ছে নিয়ে তো বাঁচে চড়ুই,ছাগল, হরিণ বা কিছু মানুষও... তোমার কথা মত জিন্দা লাশ হয়ে। ঐ চাহতটাই হল আসল কথা, নিজের জন্য একটা চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য স্থির করে, তারপর তাকে টপকে যাবার চেষ্টা। নিজের কাছে ঐ 'কুছ ভি'-টা তখনই অন্যতর মাত্রা নিয়ে ধরা দেয়।
আল-ইমরান, আত্মশ্রদ্ধায় টগবগানো টাট্টু ঘোড়া সেই মানুষ হয়ে ওঠার অভিলাষ আমার।
বুঝতে পারছি। শুভকামনা রইল।
Post a Comment